Notice Update

ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় ২৫ ফাল্গুন, ১৩৪৭ বঙ্গাব্দে হাওড়া জেলার খুরুট ষষ্ঠীতলায় জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়েস থেকেই সাহিত্যসাধনা শুরু হয় তার। ছোটবেলায় এডভেঞ্চার প্রিয় ছিলেন ও বিভিন্ন জায়গায় সাধু সন্ন্যাসীর সঙ্গ করেছেন। তার গল্প উপন্যাসে ভ্রমনের ছাপ পাওয়া যায়। বর্তমানে হাওড়ার রামরাজাতলাতে নিজ বাসভবনে থাকেন এই সাহিত্যিক। ১৯৬১ সাল থেকে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয়'র সাথে যুক্ত হন ষষ্ঠীপদ। তিনি অজস্র রহস্-রোমাঞ্চ কাহিনী, ভৌতিক গল্প, ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন। ১৯৮১ সালে তার সৃষ্ট পাণ্ডব গোয়েন্দার কাহিনী সর্বাধিক জনপ্রিয়তা দেয় তাকে। এই কাহিনীগুলি কার্টুন চিত্রে ছোটপর্দাতে পরিবেশিত হয়েছে। পান্ডব গোয়েন্দা ছাড়াও প্রাইভেট ডিটেকটিভ অম্বর চ্যাটার্জী, গোয়েন্দা তাতারের অভিযান ইত্যাদি সিরিজ রচনা করেছেন তিনি। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলির মধ্যে চতুর্থ তদন্ত, সোনার গণপতি হীরের চোখ, কাকাহিগড় অভিযান, সেরা রহস্য পঁচিশ, সেরা গোয়েন্দা পঁচিশ, রহস্য রজনীগন্ধার, দেবদাসী তীর্থ, কিংবদন্তীর বিক্রমাদিত্য, পূণ্যতীর্থে ভ্রমন, কেদারনাথ, হিমালয়ের নয় দেবী ইত্যাদির নাম করা যায়। ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় ২০১৭ সালে শিশুসাহিত্যে তার অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত সাহিত্য অকাদেমি পুরষ্কার পেয়েছেন।

বর্তমান সময়ের তরুণ বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা তৈরি করতে গেলে অনায়েসেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নেবেন কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায়, মা রওশনারা পারুল ও বাবা মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর মেয়ে সুমর্মীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই লেখকের সংসার। সিরাজগঞ্জে বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতেই বই পড়ার হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলেও লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’ তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই, যা প্রকাশনায় ছিল ‘সময় প্রকাশন’। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে, চাইল্ড ড্রিম সোসাইটি নামের একটি সংগঠনে। এছাড়াও জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে। পাঠক জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে সুমন্ত আসলামের সেরা বই হিসেবে নাম উঠে আসবে ‘হয়তো কেউ এসেছিল’, ‘জানি না কখন’ বা ‘কে তুমি’ অথবা ‘যদি কখনো’ এর মতো জনপ্রিয় সব বই এর নাম । এছাড়াও ‘নীল এই যে আমি!’, ‘আমি আছি কাছাকাছি’, ‘অ্যালিয়ান’, ‘জানালার ওপাশে’, ‘রোল নাম্বার শূন্য’, ‘বীভৎস’, ‘কেউ একজন আসবে বলে’, ‘জিনিয়াস জিনিয়ান’, ‘কোনো কোনো একলা রাত এমন’, ‘তবুও তোমায় আমি’, ‘অনুভব’, ‘মিস্টার ৪২০’, ‘স্পর্শের বাইরে’, ‘ভালো থেকো ভালোবেসে’, ‘ডাঁটি ভাঙা চশমা রাফিদ’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ’, ‘প্রিয়ব্রতর ব্যক্তিগত পাপ’, ‘জ্যোৎস্না বিলাস’, ‘মহাকিপ্পন’, ‘তপুর চালাকি’, ‘আশ্চর্য তুমিও!’, ‘হাফ সার্কেল’, ‘কঞ্জুস’, ‘মাঝরাতে সে যখন একা’, ‘আই এম গুড ডু’, ‘আই সে দ্য সান’, ‘তুমি ছুঁয়ে যাও বৃষ্টি তবু’সহ আরো অনেক বই রয়েছে লেখক সুমন্ত আসলাম এর বই সমগ্র এর তালিকায়। এছাড়াও সিরিজ আকারে লিখেছেন ‘বাউন্ডুলে’ ও ‘পাঁচ গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় কিছু বই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি একুশে বই মেলাতেও সুমন্ত আসলাম এর বই সমূহ এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ। মানুষকে কেন্দ্র করে তাকে আবর্তিত করে যা যা আছে তা-ই মূলত তার লেখার বিষয়বস্তু।

রকিব হাসানের জন্ম ১৯৫০ সালে, কুমিল্লা জেলায়। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি নিলেও নিজের ধ্যান-জ্ঞান বানিয়েছেন লেখালেখিকেই। তর্কসাপেক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ ‘তিন গোয়েন্দা’ এর লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে তিনি অন্যান্য কাজে যুক্ত ছিলেন। জনপ্রিয় মাসিক ‘রহস্যপত্রিকা’ এর সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই কৃতি লেখক। রকিব হাসান এর বই প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে, যদিও তা ছিল ছদ্মনামে। নিজ নামে প্রকাশিত রকিব হাসানের প্রথম অনুবাদ গ্রন্থ ছিলো ব্রাম স্টোকারের বিশ্ববিখ্যাত হরর ‘ড্রাকুলা’। রকিব হাসান তাঁর লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের কিশোর সমাজে দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন, যেমন করেছে তাঁর লেখা বইগুলো। তাঁর রচিত সবচেয়ে জনপ্রিয় কিশোর সিরিজ হলো কিশোর-মুসা-রবিনকে নিয়ে লেখা ‘তিন গোয়েন্দা’। এছাড়াও তিনি জাফর চৌধুরী ছদ্মনামে ‘রোমহর্ষক’ সিরিজ এবং আবু সাঈদ ছদ্মনামে ‘গোয়েন্দা রাজু’ সিরিজ লিখেছেন। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত রকিব হাসান এর বই সমূহ হলো মহাক্লাসিক অ্যারাবিয়ান নাইটস (অনুবাদ), এডগার রাইজ বারোজ এর টারজান সিরিজ (অনুবাদ), কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ (থ্রিলার), তিন বন্ধু সিরিজ (থ্রিলার), গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন (থ্রিলার) সহ বেশ কিছু ভূতের গল্প, হরর ও অনুবাদ গ্রন্থ। তাঁর বইয়ের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪০০ ছাড়িয়েছে। রকিব হাসান এর বই সমগ্র এর মধ্যে বেশিরভাগই তাঁর সৃষ্ট তিন গোয়েন্দা সিরিজের। আরও রয়েছে এরিক ফন দানিকেন, ফার্লে মোয়াট, জেরাল্ড ডুরেল এর মতো বিশ্ববিখ্যাত লেখকদের ক্লাসিক বইয়ের অনুবাদ।

নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে ২ ভাদ্র ১৩৪৩, ১৮ আগস্ট ১৯৩৬ । দীর্ঘ চার দশক ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ : সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা, বাংলাদেশের কবিগান, বাঙালীর সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সংগ্রাম, মানবমন মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব, গল্পে গল্পে ব্যাকরণ, দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞানচেতনা, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার, আমাদের চিন্তাচৰ্চার দিক-দিগন্ত, ধৰ্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভূত ভবিষ্যৎ ভাষা সংস্কৃতি উৎসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন, সত্য যে আমার যেটুকু সাধ্য । সম্পাদিত গ্ৰন্থ : সোনার তরী, প্রসঙ্গ : মৌলবাদ, জালালীগীতিকা সমগ্ৰ । বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সভাপতি এবং ত্রৈমাসিক সমাজ অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পত্রিকার সম্পাদক । মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনবদ্য আত্মজীবনী পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দৰ্শন ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই-এর পুরস্কারে সম্মানিত। সর্বোচ্চ রাষ্ট্ৰীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।

কথাসাহিত্যিক নাট্যকার ও অনুবাদক আবদুল হক (১৯১৮-১৯৯৭) গত শতাব্দীর বিশের দশকের বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের উত্তরসূরি; প্রাবন্ধিক হিসেবেই সমধিক পরিচিত। স্মৃতিকথা ও দিনলিপির নির্বাচিত অংশ এবং ছড়ানাে ছিটানাে ব্যক্তিগত রচনা মিলিয়ে সম্পন্ন হয়ে উঠেছে তাঁর এই আত্মজীবনী। এতে সংগ্রামশীল সাহিত্য-নিমগ্ন একজন মননশীল ব্যক্তিমানুষকেই খুঁজে পাওয়া যায়! এখানেও তিনি বিজ্ঞানমনস্ক ও মুক্তিবুদ্ধিরই মানুষ। রয়েছে প্রাবন্ধিকসুলভ তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, গভীর অন্তর্দৃষ্টি আর ইতিহাস চেতনার পরিচয়। আপাত অর্থে নিজের কথা বললেও তা কেবল ব্যক্তিবিশেষের আত্মকথন না হয়ে হয়ে উঠেছে। বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজের মানসবিবর্তনের ইতিহাস। আত্মজীবনীমূলক রচনা মহৎ হয়ে ওঠে আত্মস্বীকারােক্তিতেও, কারণ এর লেখক নিজের একজন মূল্যায়নকারীও বটেন! এই আত্মজীবনীও এর ব্যতিক্রম নয়। যে-সব মানুষের সম্পর্কে এখানে মন্তব্য রয়েছে তাতেও রয়েছে অনুকম্পায়ী হৃদয়ের মােহমুক্ত বিচার! ঘটনার নিকটদূরত্বে থেকে লেখা হলেও এই রচনা হয়ে উঠেছে আশ্চর্য নির্মোহতার নিদর্শন!

(জন্ম-১৯৪৪) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট নারী নেত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স্ (১৯৬৫), এমএ(১৯৬৬)এবং সমাজ বিজ্ঞানে এমএ (১৯৬৮)ডিগ্রী অর্জ্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম ফিল ১ম পর্ব্ (১৯৯৩) শেষে ‘যৌতুক: বাংলা সাহিত্যে ও সমাজে প্রতিফলন বিষয়ে পিএইচডি অভিসন্দর্ভ্ রচনা করেন। ১৯৬০-এর দশকের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী, ডাকসু’র নির্বাচিত সদস্য এবং রোকেয়া হলের ভিপি’র দায়িত্ব পালন শেষে (১৯৬৮)মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে নারী আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত মহিলা সংগ্রাম পরিষদ’ ও ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘পূর্ব্ পাকিস্তান মহিলা পরিষদ’- এর সাধারণ সম্পাদিকা ছিলেন। ১৯৭২ সাল থেকে ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। নারী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেইজিং বিশ্ব নারী সম্মেলনের (১৯৯৫) আগে ও পরে আজ পর্যন্ত নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। পেশাগতভাবে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ’ বিভাগের খণ্ডকালীন নিয়মিত শিক্ষক্ এবং ‘সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যা্পক হিসেবে কর্ম্রত। ৬০’এর দশকে থেকে লিখছেন অব্যাহতভাবে বইয়ের সংখ্যা ৩০। বেতার ও টিভিতে নিয়মিত আলোচক। ‘আমি নারী’ চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখক। সুফিয়া কামালের দুটি গল্পের নাট্যরূপ দিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে।